প্রসন্ননাথ রায়ের পর উত্তরাধিকার হিসেবে প্রথমনাথ রায় জমিদার হন। তিনি ব্রিটিশ সরকার কর্তৃক “রায়বাহাদুর” খেতাবপ্রাপ্ত হয়েছিলেন। রায়বাহাদুর প্রথমনাথ রায় ছিলেন পিতার পোষ্যপুত্র। দীঘাপতিয়া রাজভবনেই ১৮৪৯ খ্রিষ্টাব্দে তার জন্ম হয়। প্রসন্ননাথ রায় তাকে উত্তরাধিকারী মনোনীত করেছিলেন।
পিতার মৃত্যুকালে প্রথমনাথ রায় ছিলেন অপ্রাপ্তবয়স্ক। তাই জমিদারীর দায়িত্ব গ্রহণের পূর্বে কলকাতার ওয়ার্ডস ইনস্টিটিউশনে শিক্ষা লাভ করেন। তিনি ঐ বিদ্যালয় হইতে প্রবেশিকা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হইয়াছিলেন। তিনি ডাক্তার রাজা রাজেন্দ্রলাল মিত্র মহোদয়ের অভিভাবকত্বে বড় হন। কুমার প্রথমনাথ রায় বাহাদুর বয়ঃপ্রাপ্ত হলে ১৮৬৭ খ্রিষ্টাব্দের নভেম্বর মাসে কলকাতা থেকে দীঘাপতিয়ায় প্রত্যাগমন করেন এবং জমিদারী পরিচালনার দায়িত্বভার কাঁধে তুলে নেন।
তিনি দাতা, বিদ্যোৎসাহী ও জনহিতকর হিসেবে সুবিদিত হন। পিতা রাজা প্রসন্ননাথ রায় কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত ‘রামপুর-বোয়ালিয়ার প্রসন্ননাথ দাতব্য ঔষধালয়ের’ ভবন নির্মাণকল্পে তিনি ১০ হাজার টাকা দান করেছিলেন। তিনি নাখিলার কাছারিতে একটি দাতব্য চিকিৎসালয় প্রতিষ্ঠা করেন। ১৮৬৮ খ্রিষ্টাব্দের এপ্রিল মাসে রাজশাহী বালিকা বিদ্যালয়ে বাৎসরিক ২০০ টাকার সাহায্যমঞ্জুরী প্রদানের প্রতিশ্রুতি ঘোষণা করেন। বোয়ালিয়ার বালিকা বিদ্যালয়ে কৃতী ছাত্রীদের শিক্ষায় উৎসাহ প্রদানকল্পে তিনি তিনটি বৃত্তি প্রবর্তন করেছিলেন।
১৮৭১ খ্রিষ্টাব্দে রাজশাহী বিভাগের কমিশনার তার বিশেষ প্রশংসা করে ব্রিটিশ সরকারের নিকট একটি শংসামূলক প্রতিবেদন প্রেরণ করেন। এরই সূত্রে ১৮৭৭ খ্রিষ্টাব্দে দিল্লির দরবারে প্রমথনাথ রায়কে “রাজাবাহাদুর” উপাধিতে ভূষিত করা হয়। একই বৎসর রাজা বাহাদুর প্রমথনাথ রায় বঙ্গীয় ব্যবস্থাপক সভার সদস্য নিযুক্ত হন।
যশোর-মহম্মদপুরের রাজা সীতারাম রায়ের পতন হওয়ার পর তদীয় দুর্গের মন্দিরে রক্ষিত শ্রীকৃষ্ণ বিগ্রহটি ১৮৮১ খ্রিষ্টাব্দে রাজাবাহাদুর প্রমথনাথ কর্তৃক দীঘাপতিয়ার রাজভবনে আনীত ও প্রতিষ্ঠা হয়।